মুসলিম উম্মাহর শান্তি, সমৃদ্ধি ও নিজ নিজ গুনাহ মাফের পাশাপাশি দুনিয়ার সব বালা-মুসিবত থেকে হেফাজত করার জন্য দুই হাত তুলে মহান আল্লাহর দরবারে রহমত প্রার্থনার মধ্য দিয়ে গত শনিবার (৬ নভেম্বর) শেষ হয়েছে আশেকে রসুল (স:) মরহুম হাফেজ মাওলানা আহমদ (রহ:) প্রকাশ শাহ ছাহেব কেবলা কর্তৃক প্রবর্তিত ১৯দিন ব্যাপী ৫১ তম আন্তর্জাতিক সীরতুন্নবী সা. মাহফিল।
এই সিরত ময়দানে লাখো লাখো মুসল্লির অংশগ্রহণে আখেরী মোনাজাত শুরু হয়। বিশেষ তাৎপর্য ও ফজিলতপূর্ণ আখেরী মোনাজাত পরিচালনা করেন নারায়ণগঞ্জ জৈনপুর দরবারের পীর আল্লামা মুফতি ড. এনায়েত উল্লাহ আব্বাসী ওয়া সিদ্দিকি।
এ সময় ‘আমিন, আল্লাহুম্মা আমিন’ ধ্বনিতে সুবহে সাদিকের সময় আকাশ-বাতাস মুখরিত করে মহামহিম ও দয়াময় আল্লহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় লাখো লাখো মুসল্লি আকুতি জানান।
জুমাবার সকাল ৯টা থেকে শুরু হয়ে আখেরি মুনাজাতের আগ পর্যন্ত নির্ধারিত বিষয়ের ওপর আলেমগণের আলোচনা চলে।মাহ্ফিলের আখেরী দিনে সভাপতিত্ব করেন মুতাওয়াল্লী কমিটির সভাপতি ও মরহুম শাহ সাহেব কেবলার দৌহিত্র মাওলানা হাফিজুল ইসলাম আবুল কালাম আজাদ। এর আগে অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন বান্দরবান মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা মোহাম্মদ হোছাইন, ঠাকুরদীঘি হেদায়েতুল ইসলাম মাদ্রাসার পরিচালক মাওলানা সরওয়ার কামাল আজিজী ও মাওলানা সিরাজুল আরেফীন।
মাহ্ফিলের সমাপনী দিনে পূর্ব নির্ধারিত বিষয়ে আলোচনা করেন, চুনতী মাদ্রাসার শিক্ষক মাওলানা জিয়াউল করিম, শাহ সাহেব কেবলার ঘনিষ্ঠ সহচর কাজী মাওলানা নাছির উদ্দিন, আইআইইসির সাবেক প্রোভিসি প্রফেসর ড. মাওলানা আবু বকর রফিক, ড. মাওলানা ঈসা শাহেদী, ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. মাওলানা আহসান উল্লাহ, বায়তুশ শরফের পির শাহ্ মাওলানা মুহাম্মদ আবদুল হাই নদভী, মাওলানা ওবাইদুল্লাহ হামযা, মাওলানা এহসান উল্লাহ আব্বাসী, ইসলামী ব্যাংকের শরীয়াহ বোর্ড চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মাওলানা গিয়াস উদ্দিন তালুকদার, হাফেজ মাওলানা শাহ আলম ও অধ্যাপক ড. হাফেজ মাওলানা শহিদুল ইসলাম বারাকাতি প্রমুখ।
মোনাজাতের সময় সীরত মাঠের জনসমুদ্রে হঠাৎ নেমে আসে পিনপতন নীরবতা। যে যেখানে ছিলেন সেখানে দাঁড়িয়ে কিংবা বসে দুই হাত তুলে আল্লাহর দরবারে ওই সময় শামিল হন এবং বহু মুসল্লি কান্নায় বুক ভাসান।
মাহফিলে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন, মাহফিল মোতাওয়াল্লী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আবদুল মালেক ইবনে দিনার নাজাত। সমাপনী বক্তব্য রাখেন চুনতী হাকিমিয়া কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা ফারুক হোসেন।
এতে আরো উপস্থিত ছিলেন, ডা. এ জে এম সাদেক, ড. হারুনুর রশিদ, আলহাজ্ব আবু তাহের, শাহনেওয়াজ, মাহবুবুল হক, মোহাম্মদ ইদ্রিস মিনহাজ, ইমাদ উদ্দিন, মাওলানা অলি উদ্দিন মোহাম্মদ, মাওলানা শব্বির আহমদ, শাহজাদা তৈয়বুল হক বেদার, শাহাজাদা ইমাম বাইহাকী, সাইফুদ্দিন মো: তারেক, কাজী আরিফ, জাহেদুর রহমান ও মাওলানা শামসুল আলম প্রমুখ।
জুমাবার সকাল থেকে চারদিক থেকে লাখো লাখো ধর্মপ্রাণ মুসল্লি পায়ে হেঁটেই চুনতি সীরত ময়দান স্থলে পৌঁছান। বেলা ১২ টার আগেই সীরত ময়দান কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে মুসল্লিরা মাঠের আশপাশের রাস্তা, অলি-গলি, বিভিন্ন ভবনের ছাদে অবস্থান নেন। মুনাজাত স্থলে পৌঁছাতে না পেরে কয়েক লাখো মানুষ চুনতি সড়ক ও কক্সবাজার মহাসড়কে অবস্থান নিতে দেখা গেছে।
আখেরী মোনাজাতের জন্য পুরানো খবরের কাগজ, পাটি, সিমেন্টের বস্তা ও পলিথিন সিট বিছিয়ে বসে পড়েন মুসল্লিরা। এছাড়াও পার্শ্ববর্তী বাসা-বাড়ি-অফিস- দোকানের ছাদে ও যানবাহনের ছাদে মুসল্লিরা অবস্থান নেন।
অপরদিকে, আখেরী মোনাজাত শেষ হওয়ার পরপরই বিভিন্ন স্থান থেকে আশা মানুষ নিজ গন্তব্যে পৌঁছার চেষ্টা করেন। আগে যাওয়ার জন্য মুসল্লিরা তাড়াহুড়া করতে শুরু করে। এতে চুনতির সড়ক, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার এবং সংযোগ সড়কগুলোতে সৃষ্টি হয় দীর্ঘ জনজট ও যানজট।
ওইদিন সীরত ময়দান ও লোহাগাড়া উপজেলা থেকে কোন মোবাইলেই দেশের বিভিন্নস্থানে নেটওয়ার্ক যোগাযোগ সম্ভব হয়নি। মাঝে মধ্যে লাইন পেলেও মুহূর্তেই কেটে যাচ্ছিল। মোবাইল ফোন কোম্পানীগুলো নেটওয়ার্ক সুবিধা দিতে মাহফিল উপলক্ষে মাহফিলের আশপাশ এলাকায় অতিরিক্ত মোবাইল টাওয়ার সংযোগ করেও এ সমস্যার পুরো সমাধান দিতে পারেনি।
আখেরী মোনাজাত উপলক্ষে লোহাগাড়া উপজেলাসহ চারপাশের এলাকার সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কলকারখানা, মার্কেট, বিপণিবিতান, অফিসসহ সবকিছু ছিল বন্ধ।
দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে মুসল্লিদের আসতে এবং ময়দানের সার্বিক নিরাপত্তা বিধানে আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যদের ভূমিকায় প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও সরকারের প্রতি সীরত কমিটি সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
Leave a Reply