একবার সূর্যমুখী বাগানে না গেলে বোঝাই যাবে না; কী অপূর্ব দৃশ্য। মো. জসিম উদ্দীন একজন সফল কৃষক। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরামর্শে প্রথমবারের মতো সূর্যমুখীর চাষ করেছেন তিনি। চাষী মো. জসিম উদ্দীন চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার আমিরাবাদ ইউনিয়নের সুখছড়ি সাইরা পাড়া এলাকায় মৃত মুহাম্মদ হাছান আলীর পুত্র। জমিতে ফুল আর ফুল। দেখে মনে হচ্ছে মাঠজুড়ে হাসছে সূর্যমুখী। সূর্যমুখীর হাসিতে স্বপ্ন দেখছেন তিনি।
এদিকে, কৃষক জসিম উদ্দীনের এ সূর্যমুখী বাগানের এমন পরিবেশে দূর-দূরান্তের দর্শনার্থীদের ভিড়ে মুখরিত। বিকাল হতেই আশেপাশেসহ দূর-দূরান্তের লোকজন ছুটে আসছেন। সূর্যমুখী ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করছেন। স্মৃতিময় করে রাখতে ছবি তুলে ফেসবুকে পোস্ট দিচ্ছেন। এই সূর্যমুখী বাগান ভ্রমণ পিপাসুদের আকর্ষণীয় স্থানে পরিণত হয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, সূর্যমুখী ফুল চাষ করতে কম সময় আর স্বল্প খরচে ভালো লাভ পাওয়ায় সুযোগ রয়েছে। তাতে প্রান্তিক কৃষকদের আগ্রহ দেখা যাচ্ছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার আমিরাবাদ ইউনিয়নের সুখছড়ি গ্রামের জসিম উদ্দিনের নামে এক কৃষকের বাড়ির পাশের ৩৩ শতক জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছেন। তার একটি হাত নেই। তবে সে থেমে নেই তিনি। এক একটি ফুল যেন হাসিমুখে সূর্যের আলো ছড়াচ্ছে। জসিমের সফলতা দেখে অন্যান্য চাষীরাও এবার সূর্যমুখী ফুলের চাষ করতে আগ্রহী হচ্ছেন বলেও জানা গেছে।
চাষী মুুহাম্মদ জসিম উদ্দিন বলেন, উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরামর্শে প্রথমবারের মতো সূর্যমুখীর চাষ করেছি। বীজ বিনামূল্যে পেয়েছি। সূর্যমূখী ফুলের চাষে বিঘা জমিতে খরচ হয়েছে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা মাত্র। কর্তন করতে কিছু টাকা খরচ হবে। পুরো ফসলে সামান্য রাসায়নিক সার আর দুইবার সেচ দিতে হয় বাগানে। কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের সার্বিক সহযোগীতায় নিয়ে আমি সফলতা পেয়েছি। দিন যাচ্ছে আর ফুলের সংখ্যা বাড়ছে। আকারো বড় হচ্ছে। শুরুতে কিছুটা চিন্তায় থাকলেও এখন বেশ উৎফুল্ল। দেখতেই যেন মন ভরে যায়। প্রতিদিনই বাড়ছে দর্শনার্থীদের সংখ্যা। বিড়ম্বনা হলেও তাদের বারণও করতে পারছি না। তবে, যেন জমির ক্ষতি না হয় সেজন্য দর্শনার্থীদের সতর্ক করে দেয়া হচ্ছে। সূর্যমুখীর ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করছি। পাশাপাশি এর বীজের ভালো কদর রয়েছে। যা বিক্রি করে আমি আর্থিকভাবেও লাভবান হব আশা করছি। এলাকার অন্য কৃষকরাও সূর্যমুখী চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। আগামীবার ৫০/১০০ বিঘা জমিতে সূর্যমুখী চাষের পরিকল্পনা রয়েছে বলেও জানান কৃষক মো. জসিম উদ্দীন।
আমিরাবাদ ইউনিয়নে দায়িত্বপ্রাপ্ত কৃষি অফিসের ফিল্ড অফিসার রুপনা চক্রবর্তী বলেন, লোহাগাড়ার আমিরাবাদ ইউনিয়নে প্রথম সূর্যমুখী ফুলের চাষাবাদ। ইতোপূর্বে এই ইউনিয়নে কোন চাষাবাদ হয়নি। তেল ফসলের আবাদ বৃদ্ধি করার জন্য প্রথম সূর্যমুখী ফুলের চাষের উদ্যোগ নেয়া হয়। কারণ সয়াবিনের চেয়ে সূর্যমুখীর তেল বেশি পুষ্টিগুণ সম্পন্ন। আর্থিকভাবে লাভজনক হওয়ায় এ ফুলের চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলেছে। অন্য ফসলের চেয়ে কম খরচ আর অধিক লাভ হওয়ায় কৃষক জসিম অনেক বেশি খুশী। তার চাষাবাদের কারণে অনেকেই সূর্যমুখীর চাষ করার জন্য আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মুহাম্মদ মনিরুল ইসলাম বলেন, নোয়াখালী, ফেনী, লক্ষীপুর, চট্টগ্রাম ও চাঁদপুর কৃষি উন্নয়ন প্রকল্প থেকে ও প্রনোদনা কর্মসূচির আওতায় এ চাষাবাদ করতে বীজসহ সার্বিক সহযোগিতা করা হয়েছে। এটা বর্তমান সরকারের বড় ধরণের অর্জন। প্রকৃতির অপরূপ সুন্দর্য দেখে ফুলে ফুলে সজ্জিত এ উপজেলার আমিরাবাদ ইউনিয়নের সুখছড়ী গ্রাম।
তিনি আরও জানান, সুর্যমুখী ফুলের চাষাবাদে সার্বক্ষণিকভাবে সহযোগিতা করে চাষীদের পরার্মশ দেয়া হয়েছে। সরকারের আহ্বানে সাড়া দিয়ে সূর্যমুখী ফুল চাষ করা হচ্ছে। সূর্যমুখী ফুল থেকে সূর্যমুখী তেল উৎপাদন হবে। প্রতি বীজের কেজি ২২ টাকা টাকা। সূর্যমুখী তেলের প্রতি কেজি ২৫০ টাকা বিক্রি করা হয়। দেশের চাষকৃত সূর্যমূখীর মাধ্যমে তেলে ঘাটতি পূরণ করা সম্ভব। এই তেল অনেক পুষ্টিকর এবং অন্য তেলের চেয়ে অনেক ভালো।
উপজেলার চুনতি, আধুনগর ও আমিরাবাদ ইউনিয়নসহ কয়েকটি এলাকায় এবারে সূর্যমুখী ফুলের চাষ হয়েছে। সুর্যমুখীর তেল ছাড়াও খৈল দিয়ে মাছের খাবার এবং গাছ জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা যায়। অন্য সফলের তুলনায় সূর্যমুখীর উৎপাদন অনেক সহজ। পোকা-মাকড়ের কোন আক্রমন নেই। তাছাড়া বাজারেও সূর্যমুখীর চাহিদা রয়েছে, দাম অনেক ভালো। আগামীতে এ উপজেলায় এর আবাদ আরও বাড়বে। তেল জাতীয় ফসলের আবাদ বৃদ্ধির মাধ্যমে সয়াবিন আমদানি কমে আসবে বলে মনে করছি।
সূর্যমুখী ফুল বাগানের দেখতে আসা দর্শনার্থী পল্লবী বলেন, আসলে একসঙ্গে এতগুলো সূর্যমুখী ফুল আগে কখনো দেখা হয়নি। তাছাড়া সুখছড়ী গ্রামে সূর্যমুখীর বাগান আগে কখনও আমি দেখিনি তাই এখানে ছুটে আসা।
বিপাশা নামের আরেকজন দর্শনার্থী জানান, আমি চট্টগ্রাম শহরে থাকি। কিছুদিন ধরে আমার বন্ধুবান্ধব এখানে এসে ছবি তুলে ফেসবুকে আপলোড করে। সেটা আমি দেখতে পাই। আর সেখান থেকেই বাগানটি নিজের চোখে দেখার আগ্রহ জন্মে। তাই, আমি বাড়িতে আসার সাথে সাথে এখানে চলে আসি।
Leave a Reply