একসময় দেশের বনাঞ্চলগুলোতে উল্লুক দেখা যেত। তবে, এখন সিলেটের লাউয়াছড়া এবং চট্টগ্রামের কয়েকটি বনাঞ্চলে এদের উপস্থিতি দেখা মেলে, তাও কদাচিৎ। অনেক আগে চট্টগ্রামের হাজারিখিল বনেও উল্লুকের আবাসস্থল ছিল। তবে সেই আবাসস্থল এখন আর নেই। বর্তমানে আলীকদমের দিকে কিছু উল্লুক আছে। তবে, সারাদেশে এ সংখ্যা ৩শ’র বেশি হবে না।প্রাণী গবেষকরা জানিয়েছেন, উল্লুক বিপন্ন প্রাণী। এদের আবাসস্থল নষ্ট হওয়ায় বর্তমানে প্রাণীটি দেখা মিলছে না। বাংলাদেশের গিবন উল্লুক আছে, তবে এই সংখ্যা বেশি নয়। গত শনিবার এই প্রজাতির একটি উল্লুক পাচারের সময় দুই ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ওইদিন সকালে লোহাগাড়া উপজেলার চুনতি রেঞ্জ বন কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে একটি বাসে অভিযান চালিয়ে উল্লুকটি উদ্ধার করে পুলিশ। গ্রেফতার করা হয় কুমিল্লা দেবিদ্বার ফতেয়াবাদের জলিলের ছেলে মুবিন (৩০) এবং একই জেলার দাউদকান্দির পেন্নাই এলাকার মজিদের ছেলে মো. মাজহারুল (৩৫)। তারা রিয়াজউদ্দিন বাজারের নাইস বার্ড গার্ডেন নামে একটি দোকানের কর্মচারী। জানা গেছে, বান্দরবানের আলীকদম থেকে এই উল্লুকটি রিয়াজউদ্দিন বাজারে নিয়ে যাচ্ছিল পাচারকারীরা। পথে চুনতি অভয়ারণ্যে ফরেস্ট রেঞ্জ কর্মকর্তা কার্যালয়ের সামনে মারছা পরিবহনের একটি বাস থেকে উল্লুকটিসহ তাদের গ্রেফতার করা হয়। তারা পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে যে, উল্লুকটি আলীকদম থেকে এনেছে। তাদের উদ্দেশ্য ছিল রিয়াজ উদ্দিন বাজারে নিয়ে গিয়ে প্রাণীটি বিক্রি করে দেয়া। লোহাগাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শরিফ উল্লাহ ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে গ্রেফতার দু’জনকে বন্যপ্রাণী আইন অনুযায়ী প্রত্যেককে ১ বছর করে বিনাশ্রম কারাদন্ড এবং ১০ হাজার টাকা করে অর্থদন্ড ও অনাদায়ে আরও এক মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড প্রদান করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ওসি মো. আতিকুর রহমান, এসআই মো. সাজিব হোসেন, চুনতি ইউপি চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন জনু, চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. মাহমুদ হোসেন ও সাতগড় বিট কর্মকর্তা শাহ আলম হাওলাদার।চুনতির বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য রেঞ্জ কর্মকর্তা মাহমুদ হোসেন বলেন, উদ্ধারকৃত প্রাণীটির বৈজ্ঞানিক নাম গিবন উল্লুক। এটি মূলত গাছের মগডালে থাকে। ওইখানে ঘোরাফেরা, খাবার ও বাসস্থান সবকিছু করে। এই প্রাণীটি বিপন্ন প্রজাতির। বাংলাদেশের মুষ্টিমেয় কয়েকটি বনাঞ্চলে গিবন উল্লুক দেখতে পাওয়া যায়। এরা ফলমুল ও পোকামাকড় খেয়ে থাকে। এই প্রাণীটিকে ডুলাহাজারা সাফারি পার্কে নিয়ে গিয়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষে অবমুক্ত করা হবে। ওসি আতিকুর রহমান বলেন, আমাদের কাছে তথ্য ছিলো কক্সবাজারের চকরিয়া থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসা একটি যাত্রীবাহি বাসে করে দুই যুবক মহাবিপন্ন প্রজাতির একটি উল্লুক নিয়ে যাচ্ছিল। পথিমধ্যে উল্লিখিত এলাকায় গাড়িটি থামিয়ে উল্লুকসহ ওই দুইজনকে আটক করতে সক্ষম হই।
ইউএনও শরীফ উল্যাহ বলেন, আটক ব্যক্তিরা স্বীকার করেন, তারা বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে বিরল প্রজাতির এই উল্লুকটি নিয়ে যাচ্ছিলেন। বণ্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন, ২০১২ এর ৩৪ (খ) ধারা অনুযায়ী এভাবে বণ্যপ্রাণী ক্রয়-বিক্রয় এবং আমদানি-রপ্তানি করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
Leave a Reply