সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রব্যবস্থার শিকল ভেঙে বাংলাদেশ এখন অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তিনি বলেন, এ দেশ আমার; আপনার সবার। তাই সব ধর্মের মানুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এই দেশ স্বপ্নের ঠিকানাতেই শুধু পৌঁছাবে না; আমরা সেই ঠিকানাও অতিক্রম করে যাব। আজকের এই অনুষ্ঠানে হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টানসহ সব ধর্মের মানুষের মিলন মেলাই অসাম্প্রদায়িকতার অনন্য প্রতীক।
৫ মার্চ শুক্রবার বিকেলে চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলায় কর্মজ্যোতি জিনানন্দ মহাথের’র অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ সরকারের ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান দুলাল এমপি উপরোক্ত কথাগুলো বলেন।
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় সবাইকে সচতেন থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি আরও বলেন, একাত্তরের পরাজিত শক্তি যুদ্ধাপরাধী মানবতাবিরোধী সাম্প্রদায়িকতা ও ধর্মকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় এসছেলি। তারা সবসময় সাম্প্রদায়িকতা রাষ্ট্রীয়ভাবে মদদ দিয়েছে এবং লালন-পালন করেছে। এখনও এই অশুভ শক্তি সা¤প্রদায়িকতাকে পুঁজি করে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলের জন্য বিরাজমান সা¤প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। তারা নানাভাবে উস্কানি দিয়ে ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছে। এই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে আমাদের সবাইকে সচেতন থাকতে হবেও ধর্ম প্রতিমন্ত্রী বলেন।

দু’দিনব্যাপী ব্যাপক আয়োজনের মধ্যে দিয়ে উপজেলায় সম্পন্ন হল কর্মজ্যোতি জিনানন্দ মহাথের’র অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া। গত ৪ ও মার্চ দু’দিনব্যাপী এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে বক্তারা প্রয়াত কর্মজ্যোতি জিনানন্দ মহাথের’র কর্মময় ও ধর্মীয় জীবনের উপর গুরুত্বারোপ করেন। উপজেলার বড়হাতিয়ায় ইউনিয়নের খুসাঙ্গের পাড়া গ্রামের মাঠে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অন্ত্যেষ্টিক্রিয়াকে কেন্দ্র করে যেখানে সাংস্কৃতিকসহ বিভিন্ন বা নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এই অনুষ্ঠান পরিণত হয়েছে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের মিলন মেলায়।
প্রধান দিনের অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া উদযাপন পরিষদের সভাপতি সদ্ধর্মনিধি ধর্মদর্শী মহাথের। উদ্বোধন করেন ধর্মদূত এস. লোকজিজৎ থের। প্রধান অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা এম. রেজাউল করিম চৌধুরী। স্বাগত বক্তব্য রাখেন অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বিজয় বড়ুয়া। এছাড়াও অনুষ্ঠানে আলংনৃত্য, সমবেত প্রার্থনা, বুদ্ধকীর্তন ও মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন ছিল।
দ্বিতীয় দিনের প্রথম অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন উপ-সংঘরাজ শাসনস্তম্ভ ভদন্ত ধর্মপ্রিয় মহাথের। প্রধান অতিথি ছিলেন উপসংঘরাজ স্মৃতিঘর ড. শীলানন্দ মহাথের, দ্বিতীয় অধিবেশনে শুরু বেলা দেড়টায়। এ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশী বৌদ্ধদের সর্বোচ্চ ধর্মীয়শুরু সংঘরাজ শানশোভন ড. জ্ঞানশ্রী মহাথের। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সরকারের ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান এমপি। অধিবেশনের উদ্বোধন করেন পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি। স্বাগত বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ও আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তর সম্পাদক ব্যারিষ্টার বিপ্লব বড়ুয়া।

আমন্ত্রিত অন্য অতিথিবৃন্দের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক সিরাজুল মোস্তফা, জাফর আলম এমপি (কক্সবাজার-১), মনোরঞ্জন শীল গোপাল এমপি (দিনাজপুর-১), ওয়াসিকা আয়েশা খান এমপি, চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মো. আনোয়ার হোসেন, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মো. মমিনুর রহমান, জেলা পুলিশ সুপার এসএম রশিদুল হক পিপিএম সেবা। এছাড়াও বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের বিভিন্ন সংগঠনের নেতাসহ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের ভিক্ষুরা বক্তব্য রাখেন।
উল্লেখ্য যে, কর্মজ্যোতি জিনানন্দ মহাথের ১৯৪৯ সনের ৪ ফেব্রুয়ারি লোহাগাড়া উপজেলার বড়হাতিয়া খুসাঙ্গের পাড়া জন্মগ্রহণ করেন। গত ২০০২ ইং সনের ২২ জুলাই তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃতে্যুর পর খুসাঙ্গের পাড়া মহাবৌধি বিহারে রাখা হয়েছিল।
Leave a Reply