৪ অক্টেবার (সোমবার) দুপুরে লোহাগাড়া উপজেলার ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সুখছড়ি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক শাহানা চৌধুরীকে অবসরজনিত বিদায় সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে। ওই সময় দীর্ঘ কর্মজীবনের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন তিনি। তাঁর কৃতিত্বের কথা স্মরণ করে অতিথি ও শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের চোখেও পানি চলে আসে।
দীর্ঘ ৩৯ বছরের শিক্ষকতা জীবন শেষ করে অবসর নিয়েছেন তিনি। সুখছড়ি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় এই সংবর্ধনা সভার আয়োজন করে।
বক্তারা বলেন, শিক্ষক শাহানা চৌধুরী দীর্ঘদিন ধরে এ অঞ্চলের মানুষের মাঝে জ্ঞানের আলো বিলিয়েছেন। যিনি বিদায় নিচ্ছেন তিনি সকলের শুধু প্রিয় শিক্ষক হিসেবে নয় একজন হাসি খুশি মানুষ ছিলেন। তিনি বিদ্যালয় থেকে বিদায় নিলে কি হবে আমাদের অন্তর থেকে বিদায় নিতে পারবে না।
অত্র বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি রিটন দাশের সভাপতিত্বে এতে বক্তব্য রাখেন সুখছড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাস্টার মুহাম্মদ আলি জিন্নাহ, সিনিয়র শিক্ষক কার্তিক দাশ, সুখছড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক অনুপ কুমার দাশ, সুখছড়ি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিক দিলরুবা বেগম, বিদায়ী শিক্ষক শাহানা চৌধুরীর পুত্র স্থপতি আসাদুজ্জামান চৌধুরী সুমন, আবদুল মন্নান কন্ট্রাক্টর, বাদল কান্তি দাশ, সমির ভট্টাচার্য, দক্ষিণ সুখছড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিক এটলী দাশ গুপ্ত, সুখছড়ি মৌলভী পাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিক প্রীতি কনা দাশ ও সুখছড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক দেবাশীষ আচার্য প্রমূখ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সুখছড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক মোবারক আলী।
বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক দিলরুবা বেগম ও অন্যান্য সহকারী শিক্ষকবৃন্দ তাঁদের বক্তব্যে বলেন, সহকর্মী হিসেবে শাহানা চৌধুরী অত্যন্ত কর্মঠ, সৎ ও আদর্শিক শিক্ষক ছিলেন। তিনি একজন ‘রত্মগর্ভা মা’ও। উপজেলায় ২০১৪ সালে ও ২০১৫ সালে শ্রেষ্ঠ মা হিসাবে ও শ্রেষ্ঠ শিক্ষক হিসাবে পুরস্কৃত হয়েছেন। তার হাত ধরেই মূলত সংস্কৃতি চর্চায় অনন্য হয়ে উঠে সুখছড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয়। জাতীয় দিবস থেকে যখন বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ডাকা হতো তখন বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কেউ অংশগ্রহণ করতো না। কিন্তু তিনি আমাদের শিক্ষার্থীদের নিয়ে যেতেন। তারা পুরস্কার পেতো। তাঁর আনন্দ লাগত। তিনি নিজে জারি গান লেখেছেন। সে গান গেয়ে আমাদের শিক্ষার্থী জেলায় প্রথম হয়েছে। শাহানা চৌধুরী ম্যাডামের প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ ছিল না। তিনি অনুশীলনের জন্য ছাত্র-ছাত্রীদের বাড়িতে নিয়ে আসতেন। তাঁর বাড়ির ছাদে তাদের নাচ, গান অনুশীলন করাতেন। এটা তো খুব গরীব ও প্রত্যন্ত গ্রাম। অনেক শিক্ষার্থী আছে যারা খেয়েও আসতো পারত না। তিনি তাদের জন্য নিজ বাড়িতে খাবার রান্না করতেন। সব মিলিয়ে মেধা ও মননের সৌন্দর্যের যত্ন নিয়ে আলোকিত মানুষ গড়ার চেষ্টা করতেন সর্বদা।
সহকর্মীরা আরো বলেন, শাহানা চৌধুরী ম্যাডামের সন্তান আসাদুজ্জামান সুমন ২০০৮ সালে ভারতের জি. কে সিমেন্ট আয়োজিত দক্ষিণ এশিয়ার শ্রেষ্ঠ তরুণ স্থপতি হিসাবে ‘ইয়াং আর্কিটেকচার অব দ্য ইয়ার’ আন্তর্জাতিক পুরস্কার অর্জন করেছেন। প্রিয় ম্যাডামের বিদায়ে আমাদের মন খুবই খারাপ ৷ এই বিদ্যালয়কে এই পর্যায়ে নিয়ে আসায় তাঁর অবদান অনস্বীকার্য ৷ শত ইচ্ছা সত্ত্বেও তাঁকে ধরে রাখার উপায় নেই ৷ যা হোক, তাঁর অবসর জীবন সুখের হোক ও শান্তির হোক-মনেপ্রাণে এটাই আমাদের কামনা।
এ উপলক্ষে আয়েজিত বিদায় অনুষ্ঠানে সামাজিক সংগঠন ও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে তাঁকে সংবর্ধনা ক্রেস্ট প্রদান করা হয়। ওই সময় আয়োজিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
Leave a Reply